SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ | NCTB BOOK

সালোকসংশ্লেষণ শব্দটিকে যদি আমরা ভাঙি, তবে পাওয়া যায়: স+আলোক+সংশ্লেষণ। সংশ্লেষণ শব্দটির অর্থ তৈরি করা বা হওয়া। তার মানে, আলোর উপস্থিতিতে যে সংশ্লেষণ হয়, তাকেই আমরা সালোকসংশ্লেষণ বলতে পারি। ইংরেজিতেও কিন্তু বিষয়টা এমনই বুঝায়। সালোকসংশ্লেষণ এর ইংরেজি প্রতিশব্দ Photosynthesis শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দ photos (অর্থ: আলোক; এখানে সূর্যালোক) ও synthesis (অর্থ: সংশ্লেষণ বা তৈরি করা) এর সমন্বয়ে গঠিত। এক কথায় বলা যায়, সালোকসংশ্লেষণ বা Photosynthesis- এর অর্থ: সূর্যালোকের উপস্থিতিতে রাসায়নিক সংশ্লেষণ।

কী ঘটে এ সময়ে? কোন কোন রাসায়নিক উপাদান বা কাঁচামাল অংশ নেয় কিংবা তৈরি হয় এই প্রক্রিয়ায়? কোথায় সংঘটিত হয় জীবজগতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রক্রিয়া? নিচের আলোচনায় আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।

সালোকসংশ্লেষণ এর বিক্রিয়া

সালোকসংশ্লেষণ হচ্ছে একটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া যা সবুজ উদ্ভিদ এবং কিছু বিশেষ অণুজীবের (যেমন: সবুজ শৈবাল, সায়ানোব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি) কোষে সংঘটিত হয়। প্রক্রিয়াটিকে নিম্নলিখিত কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয় :

১. বাতাস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) উদ্ভিদের পাতায় প্রবেশ করে;
২. উদ্ভিদের মূল দ্বারা শোষিত পানি পরিবাহিত হয়ে পাতায় পৌঁছায়; 

৩. পাতার কোষের বিশেষ অঙ্গাণু ক্লোরোপ্লাস্টে সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে, CO, ও পানির মধ্যে বিক্রিয়া হয় এবং জটিল কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় অণু তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন প্রকৃতিতে নির্গত হয় ।

সুতরাং পুরো বিষয়টিকে এভাবে বলা যায়- সূর্যের শক্তি ব্যবহার করে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) এবং পানির মধ্যে বিক্রিয়ায় শর্করা ও অক্সিজেন তৈরির প্রক্রিয়াটিই সালোকসংশ্লেষণ। খুব ছোট সহজ একটি বিক্রিয়ার মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি দেখানো যায়,

এখানে ডান পাশে  দ্বারা কার্বহাইড্রেটকে বুঝানো হয়েছে।

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় যে অক্সিজেন উৎপন্ন হয় সেটি খুব সহজ একটি পরীক্ষণ বা experiment-এর মাধ্যমে দেখানো যায়।

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন নির্গমন পরীক্ষা

পরীক্ষার উপকরণ: একটা বিকার, একটা ফানেল, একটা টেস্টটিউব, পানি, সতেজ জলজ উদ্ভিদ হাইড্রিলা ও একটা দিয়াশলাই।

পরীক্ষণ পদ্ধতি: বিকারটির দুই-তৃতীয়াংশ পানি দিয়ে পূর্ণ করি। সতেজ হাইড্রিলা উদ্ভিদগুলো বিকারে পানিতে রেখে ফানেল দিয়ে এমনভাবে ঢেকে দিই যেন হাইড্রিলা উদ্ভিদগুলোর কাণ্ড ফানেলের নলের উপরের দিকে থাকে। এরপর বিকারে আরও পানি ঢালি যেন ফানেলের নলটা সম্পূর্ণভাবে পানিতে ডুবে যায়। এবার টেস্টটিউবটা পানি দিয়ে পূর্ণ করে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে বন্ধ করে ফানেলের নলের উপর এমনভাবে উল্টিয়ে দিই, যেন টেস্টটিউবের পানি বের না হয়ে যায়। এরপর সব কিছুকে সূর্যালোকে রাখি। কিছুক্ষণ পর দেখতে পাবে হাইড্রিলা উদ্ভিদগুলোর কাণ্ডের প্রান্ত দিয়ে বুদবুদ আকারে গ্যাস বের হয়ে টেস্টটিউবে জমা হচ্ছে এবং টেস্টটিউবের পানি নিচে নেমে যাচ্ছে। টেস্টটিউবটা প্রায় সম্পূর্ণটা গ্যাসে পূর্ণ হলে, দিয়াশলাইয়ের একটা সদ্য নিভন্ত কাঠি টেস্টটিউবের মুখে প্রবেশ করলে, নিভন্ত কাঠিটি দপ করে জ্বলে উঠবে। দিয়াশলাইয়ের কাঠিটা কেন দপ করে জ্বলে উঠবে?

আমরা জানি অক্সিজেন এমন একটি গ্যাস যেটি দাহ্য কোনো পদার্থের স্পর্শে এলে তাকে জ্বালিয়ে দেয়। উপরের পরীক্ষায় দিয়াশলাইটি জ্বলে উঠেছে, যা প্রমাণ করে যে বিকারে উৎপন্ন গ্যাসটি হচ্ছে অক্সিজেন।

সালোকসংশ্লেষণের স্থান ( Site of Photosynthesis)

সূর্যের আলোর শক্তিকে জৈব রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করতে পারে এমন জীবে সালোকসংশ্লেষণ হয়। এই তালিকায় কিছু ব্যাকটেরিয়া এবং শৈবালও আছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উদ্ভিদের সবুজ পাতা, যেখানে সালোকসংশ্লেষণের সবচেয়ে আদর্শ অবস্থাটি পাওয়া যায়। আমরা এখানে কেবল উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণের কথাই আলোচনা করব।

চারপাশে তাকালে আমরা যেসব উদ্ভিদ দেখতে পাই, সেগুলোর প্রায় অধিকাংশেরই সবুজ পাতা থাকে। চারপাশে অন্য রঙের পাতাও থাকতে পারে। পাতা হচ্ছে, উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণের প্রধান অঙ্গ। পাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর পৃষ্ঠে ছোট ছোট ছিদ্র থাকে, যা দিয়ে বাতাস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড পাতার কোষের ভেতর প্রবেশ করতে পারে। এই ছোট ছোট ছিদ্রকে পত্ররন্ধ্র (stomata) বলে। পত্ররন্ধ্রগুলো এক ধরনের বিশেষ কোষ দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। এসব কোষকে বলা হয় গার্ড সেল (Guard cell) বা রক্ষক কোষ।

পাতার প্রস্থচ্ছেদ

গাছের পাতা সবুজ হয় কেন জানো? কারণ, পাতার কোষে ক্লোরোফিল (Chlorophyll) নামক এক ধরনের সবুজ কণিকা থাকে। ক্লোরোফিলের উপস্থিতিই পাতার সবুজ রঙের জন্য দায়ী। এই ক্লোরোফিল কণা কিন্তু কোষের ভেতরে ছড়িয়ে- ছিটিয়ে থাকে না। বরং উদ্ভিদ কোষের ক্লোরোপ্লাস্ট (Chloroplast) নামক একটি বিশেষ অঙ্গাণুর মধ্যে অবস্থান করে। ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন বৈশিষ্ট্য এমন যে, এর ভেতরে বিশেষভাবে ভাঁজ হয়ে থাকা দুই স্তরবিশিষ্ট ঝিল্লি (Membrane) রয়েছে। এই ঝিল্লির গায়েই ক্লোরোফিল অণুগুলো নির্দিষ্ট অবস্থানে সজ্জিত থাকে। এই ক্লোরোপ্লাস্ট-এর উপস্থিতি হচ্ছে উদ্ভিদ কোষের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। প্রাণী কোষে কিন্তু ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে না। ক্লোরোফিলসমৃদ্ধ সবুজ পাতাই উদ্ভিদের প্রধান সালোকসংশ্লেষকারী অঙ্গ। তবে পাতা ছাড়াও যে কোনো সবুজ সজীব কোষে অর্থাৎ সবুজ কাণ্ডে (ফণীমনসা, লাউ, কুমড়া, পুঁই ইত্যাদি), ফুলের সবুজ বৃতিতে, অর্কিড মূলের সবুজ অংশে সালোকসংশ্লেষণ হতে পারে।

উদ্ভিদে ক্লোরোফিলের উপস্থিতি

সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব

সালোকসংশ্লেষণ হলো উদ্ভিদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ খাদ্য উৎপাদন করে। জীবজগতে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে সংক্ষেপে এর গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
১. পৃথিবীর শক্তির উৎস সূর্য থেকে উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে।
২. খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে উক্ত শক্তি সকল জীবে সঞ্চারিত হয়।
৩. পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীর খাদ্য প্রস্তুত হয় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়। 

৪. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় CO, ও O, অনুপাত ঠিক রাখতে সালোকসংশ্লেষণ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৫. মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান যেমন কয়লা, পেট্রোল, রেয়ন, কাগজ, রাবার, ওষুধ ইত্যাদি সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার ফল।

Content added || updated By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.